আধুনিক যুগে Ai শব্দটি শুনেনি এমন মানুষ পাওয়া খুব কম। যার পূর্ণরূপ হচ্ছে Artificial intelligence. মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে একপ্রকার সিমুলেশন যেটি মানুষের মত করে চিন্তা করতে সক্ষম হয়। একই সাথে জটিল সমস্যার সমাধান করে থাকে। শুধু তাই নয় মানুষের মতন নতুন কিছু শিখতে পারে এবং সে অনুযায়ী সমস্যার সমাধানও দিতে পারে। অর্থাৎ মানব জীবনের বুদ্ধিমত্তার পরেই যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রয়েছে, তার বড় একটি অংশ হচ্ছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি সাধারণত অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিং-সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশাল তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে ফলাফল ও অনুমান জানিয়ে থাকে। মানুষ বেশি কাজ করলে ক্লান্ত হয়ে যায়, বিরতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির বিরতির প্রয়োজন নেই।
আমার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি তখন পূর্বের সমস্ত ডেটা কে ব্যবহার করে উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। উদাহরণ হিসেবে যদি বলতে চাই, আমাদের শিক্ষকরাও যখন কোন ছাত্রকে ভালো বা খারাপ এই দুই ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে তখন কিন্তু তাদের হুট করে দেখেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় না।
তাদের এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের পূর্বের বেশকিছু পরীক্ষার রেজাল্ট, আচরণ, নৈতিক গুনাবলি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে। পূর্বের কিছু তথ্য-উপাত্ত দ্বারা সাময়িক ভাবে বলে দেয়া যায় ছাত্রটি ভালো কিংবা খারাপ। এই রকম তো হয়, তাইনা?
এবার একটু সূক্ষ্মভাবে যদি দেখি, ছাত্র-ছাত্রীদের গত এক বছরের ডাটা পর্যালোচনা করে যে তথ্য দেয়া যায়, তার চেয়ে আরো নিখুঁত তথ্য দেয়া সম্ভব যদি ছাত্র-ছাত্রীদের বিগত পাঁচ থেকে ছয় বছরের রেজাল্ট পর্যালোচনা করা যায়।
এইজন্য বর্তমান সময়ে বহুল প্রচলিত ‘যার তথ্যভান্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ, সে তত বেশি উন্নত করবে।’ মানুষের তো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ব্রেইন রয়েছে, যা কম্পিউটারের নেই। কম্পিউটার এ ধরনের জটিল চিন্তাগুলো করার জন্য ব্যবহার করে থাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রকারভেদ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আমরা এই তিন প্রকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পর্কে জানবোঃ
Narrow Ai: একে বাংলায় দুর্বল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বোঝায়। এটির কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সমস্যার সমাধান এবং কাজ করা। বর্তমানে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে।
Artificial general intelligence: যখন কোন মেশিন অথবা কম্পিউটার মানুষের মতো কাজ করতে সক্ষম হয় তখন তাকে স্ট্রং এআই বলা হয়। তবে এর ব্যবহার এখন পর্যন্ত সব জায়গায় পৌঁছেনি।
Super intelligence: এখনও অব্দি সুপার ইন্টেলিজেন্স প্রয়োগ করা হয়নি। তবে বুঝতে পারা যাচ্ছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের মতো কাজ করবে এমনকি মানুষের প্রতিভাকেও অতিক্রম করে যেতে পারবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর লক্ষ্য
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লক্ষ্য হচ্ছে এমন প্রযুক্তি তৈরি করা যার মাধ্যমে কম্পিউটার এবং মেশিনগুলো বুদ্ধিমান পদ্ধতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে। বুদ্ধিমত্তার তৈরি সাধারণ সমস্যাগুলো কয়েকটি ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে।
শেখা (Learning):
মানুষকে কোন কিছু শেখানোর যেমন অনেকগুলো পথ রয়েছে তেমনি কম্পিউটারকে শেখানোর জন্য হরেক রকম কৌশল রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ট্রিয়াল এবং ইরর। আপনি যদি কম্পিউটার-এর সাথে খেলেন, তাহলে দেখবেন মেশিন অটোমেটিক ‘চাল’ দিতে থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না চেকমেট হবে। যদি চেকমেট হয় তাহলে সে পুরো গেমপ্ল্যান’টি সেভ করে রাখবে। এভাবে প্রত্যেকটি সম্ভাব্য গেমস সংরক্ষন করে রাখবে।
এখন কম্পিউটার উক্ত গেইমের প্রতিটি মুভ’কে সলভিং হিসেবে ধরে নিবে। এই সমস্যা সমাধানের প্রয়োগকে বলা হয় ‘জেনারেলাইজেশন।’ জেনারেলাইজেশন এর মাধ্যমে নতুন সমস্যার সমাধান পদ্ধতির সাথে পূর্বের সংরক্ষিত সমস্যার তুলনা করে তারপর নতুন সমাধান দিয়ে থাকে।
যুক্তিসংগত চিন্তা (Reasoning):
যেকোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত চিন্তা করা অবশ্যই প্রয়োজন। এখন কম্পিউটার কিভাবে যুক্তিসংগত চিন্তা করবে? কম্পিউটার এটিকে দু’ভাগে করতে পারে। ডিডাকটিভ এবং ইন্ডাক্টিভ উপায়ে। ডিটেকটিভ হচ্ছে অনুমাননির্ভর যেমন ধরুন ‘হয়তো সামিউল চায়ের দোকানে নতুবা অডিটোরিয়ামে।’ এখন কম্পিউটার যেটা বুঝবে সেটা হচ্ছে প্রথম চেক করে দেখবে সামিউল কি চায়ের দোকান আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তো উত্তর পেলে। আর যদি না থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে অডিটরিয়ামে আছে।
আর ইন্ডাক্টিভ উপায় হচ্ছে, আগে থেকেই কোন বিষয়টি কিভাবে চিন্তা-ভাবনা করবে সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া। যেমন ধরুন বিজ্ঞানের কোন বিষয় যদি আগে থেকে ব্যাখ্যা করে কম্পিউটারকে বোঝানো হয়, তাহলে সে খুব সহজে ধরতে পারবে তার এই ক্ষেত্রে সমাধান কি দেওয়া উচিত।
সমস্যা সমাধান (Problem Solving):
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সমস্যার সমাধান বলতে কিছু নির্দিষ্ট উপায় সার্চ করতে করতে সলিউশন খোঁজাকে পদ্ধতিকে সমস্যার সমাধান বলে। এ ধরনের সমস্যার সাধারণত দুই ভাবে করা সম্ভব। স্পেশাল পারপোজ এবং জেনারেল পারপোজ। স্পেশাল পারপোজ এর ক্ষেত্রে আগে থেকেই কোন সমস্যার সমাধানের একটি রোডম্যাপ দেয়া থাকে। যেটি ধরে সামনে এগোতে থাকলে সমস্যাটি একটা সমাধান বের করা যায়।
অপরটি হচ্ছে জেনারেল জেনারেল পারপোজ। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি পদক্ষেপ ধীরে ধীরে গ্রহণ করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে। যেমন কোন রোবটকে প্রথমে বলা হলো, ডান দিকে যাও। তারপর বাম দিকে, উপরে, নিচে এভাবে প্রত্যেকটা দিকে বর্ণনা করে সমস্যাটির সমাধান এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপলব্ধি (Perception):
সেলফ ড্রাইভিং কার সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি। এই কারণগুলো সাধারণত ক্যামেরার বিশেষ সেন্সর এর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। গাড়ির উপরে থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রী ক্যামেরা সেটআপ করা থাকে। এই ক্যামেরাগুলো অবস্থার পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে গাড়ির পরবর্তী মুভমেন্টে ভূমিকা রাখে।
তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও উপলব্ধি বিষয়টি এভাবে কাজ করা থাকে। বিভিন্ন উপায়ে তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা সমাধান করা হয়, যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এ ডিসিশন নিতে সহায়তা করে থাকে।
ভাষা ব্যবহার (Using Language):
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভাষা একটি বড় ধরনের ফ্যাক্টর। সেলফ ড্রাইভিং কার গুলো যখন কোন স্পেসিফিক লোকেশন এর মধ্য দিয়ে যায়, তখন সেখানকার সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো তাকে বুঝতে হয়। যেমন রাস্তায় যে ধরনের ট্রাফিক ইন্ডিকেটরগুলো দেয়া থাকে সেগুলোর মধ্যে ও স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়। এই ভাষাগুলো যদি সিস্টেম বা মেশিন ধরতে না পারে তাহলে সে ভুল নির্দেশনা দিতে পারে।
এছাড়াও অনেক ভাষা আছে উচ্চারণের উপর নির্ভর করে বা ভাষার গতির উপর নির্ভর করে সবকিছু পরিবর্তন হয়। তাই ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অনেক বেশি সতর্ক থাকে। যদি কোন উপায়ে ভুল উপাত্ত গ্রহণ করে, তাহলে তার পুরো ডিসিশন মেকিং-এ সেট এর প্রভাব পড়বে।
গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর চমক আমরা অনেক দেখেছি। গুগোল কিংবা সিরির কথাই ভাবুন আপনার গুগলের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট আপনার আগের কনভারসেশন এর উপর ভিত্তি করে পরবর্তী রিপ্লাই গুলো দিতে পারে। এটিও কিন্তু একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এমনকি আপনার স্ক্রীনে কি ঘটছে সে অনুযায়ী যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
গুগলের 2020 I/O ইভেন্টে সেবার দেখিয়েছিল কিভাবে অটোমেটিক কল সেটআপ করে দেওয়া যায় নির্দিষ্ট কিছু কলের জন্য। আপনি যদি কোনো কারণে বিজি থাকেন গুগলের অটোম্যাটিক অ্যালগরিদম সেটি বুঝে নিয়ে কে কল করেছেন তার সঙ্গে কথা বলতে পারে।